Ad beside title

অম্ল ও ক্ষার-Acid and Base

 অম্ল ও ক্ষার-Acid and Base

এসিড ও ক্ষার সম্পর্কে যতগুলো মতবাদ প্রচলিত তাদের মধ্যে "আরহেনিয়াস মতবাদ" , ব্রোনস্টেড-লাউরীর" ও লুইসের মতবাদ অন্যতম। নিচে এসিড-ক্ষার সম্পর্কীত এ মতবাদ গুলো নিয়ে আলোচনা হলোঃ
Acid and Base
Copyright reserved by-knowledgepediabd.blogspot.com



১.আরহেনিয়াস মতবাদঃ  বিজ্ঞানী আরহেনিয়াস (Arrhenious)  জলীয় দ্রবণের মাধ্যমে এসিড ও ক্ষার এর সংজ্ঞা প্রদান করেন। বিজ্ঞানী আরহেনিয়াসের মতে-
অম্ল বা এসিডঃ যে সকল `H` পরমাণু যুক্ত যৌগ জলীয় দ্রবণে `H^+` আয়ন দান করে তাদের অম্ল বা এসিড(Acid) বলে। যেমনঃ   `HCl \rightarrow H^+  + Cl^- `
ক্ষার বা বেসঃ যে সকল যৌগ জলীয় দ্রবণে `OH^- ` (হাইড্রক্সিল আয়ন) দান করে তাদের কে ক্ষার বা বেস (Base)  বলে। যেমনঃ  `NaOH \rightarrow Na^+ + OH^- `

আরহেনিয়াসের এই মতবাদের কিছু সফলতা এবং সীমাবদ্ধতা আছে।

সফলতাঃ
*এই মতবাদের সাহায্যে বাফার দ্রবনের ক্রিয়া-কৌশল সহজে বর্ণনা করা যায়।
*এই মতবাদের সাহায্যে অম্ল-ক্ষারক ট্রাইটেশন সহজে ব্যাখ্যা করা যায়।
*জলীয় মাধ্যমে অম্ল-ক্ষারকের বিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে।
*লবনের আদ্র বিশ্লেষণের পর `p^H` নির্ণয় করতে এই মতবাদ ব্যাবহার করা হয়।
*এই মতবাদ দ্বারা অম্ল-ক্ষারকের শক্তির তুলনা করা যায়।

সীমাবদ্ধতাঃ
*জলীয় মাধ্যম ছাড়া এই মতবাদ প্রয়োগ করা যায়না।
*`H` পরমাণু বিহীন অম্লের অম্লত্ব এই মতবাদ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়না।
*`OH^-` মূলকহীন যৌগের ক্ষারত্ব এই মতবাদ দিয়ে  ব্যাখ্যা করা যায়না।
*এই মতবাদ দ্বারা অ্যামিন সমূহের ক্ষার ধর্ম ব্যাখ্যা করা যায়না।
* লবনের অম্ল বা ক্ষার ধর্ম এই মতবাদ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়না।

আরহেনিয়াসের জলীয় মতবাদে এসকল সীমাবদ্ধতা দূর করে পরবর্তীতে বিজ্ঞানী ব্রোনস্টেড(Bronsted ) ও লাউরী( Lowry)   এসিড ও ক্ষারের একটি আধুনিক মতবাদ প্রদান করেন। 

২.ব্রোনস্টেড-লাউরীর মতবাদঃ এই মতবাদ অনুসারেঃ

এসিডঃ যে সকল যৌগ বা আয়ন বিকিয়ার সময় প্রোটন দান করে তাদেরকে এসিড বলে ।যেমনঃ
`NH_3 + HCl \rightarrow NH_4^+ + Cl^-`
এখানে `HCl` একটি প্রোটন তথা `H^+` দান করেছে। তাই `HCl` একটি অম্ল বা এসিড।

ক্ষারকঃ  যে সকল যৌগ বা আয়ন বিক্রিয়ার সময় প্রোটন গ্রহন করে তাদের কে ক্ষারক বলে। যেমনঃ
`OH^-  +  HCl \rightarrow H_2O + Cl^- `
এখানে `OH^-` আয়ন একটি প্রোটন তথা `H^+` গ্রহন করেছে। তাই `OH^-` একটি ক্ষারক।

এই মতবাদের সাহায্যে এসিড ও ক্ষারক কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
i) আণবিক অম্ল ও ক্ষারকঃ কোন যৌগ যদি এসিড বা ক্ষারের মতো আচরণ করে তাহলে তাদের কে যথাক্রমে "আণবিক এসিড" ও "আণবিক ক্ষার বলে। যেমনঃ
আণবিক অম্লঃ`HCl, HNO_3, H_2S` ইত্যাদি।
আণবিক ক্ষারঃ `NH_3 , NH_2OH, CH_3COOH` ইত্যাদি।

ii) ক্যাটায়নিক অম্ল ও ক্ষারকঃ কোন ক্যাটায়ন(ধনাত্মক চার্জ যুক্ত আয়ন) যদি এসিডের মত আচরন করে তবে তাকে ক্যাটায়নিক অম্ল এবং ক্ষারের মতো আচরন করলে তাকে ক্যাটায়নিক ক্ষার বলে। যেমনঃ
ক্যাটায়নিক অম্লঃ `NH_4^+ , H_3 O^+ `
ক্যাটায়নিক ক্ষারঃ `[Cu(OH)(H_2O)_3]^+ `

iii) অ্যানায়নিক এসিড ও ক্ষারকঃ কোন অ্যানায়ন (ঋনাত্মক চার্জ যুক্ত আয়ন) যদি এসিডের মত আচরন করে তবে তাকে অ্যানায়নিক অম্ল এবং ক্ষারের মতো আচরন করলে তাকে অ্যানায়নিক ক্ষার বলে। যেমনঃ
অ্যানায়নিক অম্লঃ `HSO_4^- , HPO_4^{2-} `
অ্যানায়নিক ক্ষারঃ `Cl^- , OH^- `

ব্রোনস্টেড লাউরীর মতবাদ অনুসারে এসিড প্রোটন দান করে এবং ক্ষার প্রোটন গ্রহন করে। অর্থাৎ এসিড ও ক্ষারের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে । আর সেটা হলো প্রোটন আদান-প্রদান । কিন্তু আমরা জানি বিক্রিয়ার সময়  ইলেক্ট্রনের আদান-প্রদান ঘটে। অতএব যেকোন বিক্রিয়ায় এসিড -ক্ষার শনাক্ত করতে আমাদের কে ইলেক্ট্রনের আদান-প্রদান ও হিসেব করতে হবে। এই ধারণা থেকেই বিজ্ঞানী লুইস(`G.N.Lewis`) ইলেক্ট্রন আদান-প্রদানের উপর ভিত্তি করে অম্ল-ক্ষারকের একটি সর্বাধুনিক মতবাদ দেন।নিচে লুইস মতবাদ নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

৩.লুইস মতবাদঃ আমরা জানি, প্রোটন দান করলে ধনাত্মক চার্জ কমে(কেননা প্রোটনের চার্জ ধনাত্মক) অর্থাৎ ঋনাত্মক চার্জ বৃদ্ধি পায়।আবার ইলেক্ট্রন গ্রহন করলেও কিন্তু ঋনাত্মক চার্জ বৃদ্ধি পায় কেননা ইলেক্ট্রন ঋনাত্মক। অতএব আমরা বলে পারি,

প্রোটন দান করা মানে ইলেক্ট্রন গ্রহন করা এবং এক্ষেত্রে চার্জ কমে।
বিপরীতভাবে, প্রোটন গ্রহন করা মানে ইলেক্ট্রন দান করা এবং এক্ষেত্রে চার্জ বৃদ্ধি পায়।

অতএব লুইস মতবাদ অনুসারে,

অম্লঃ যে সকল অণু, আয়ন বা মূলক ইলেক্ট্রন গ্রহন করতে সক্ষম তাদের কে অম্ল বা এসিড বলে।

ক্ষারকঃ যে সকল অণু, আয়ন বা মূলক ইলেক্ট্রন দান করতে সক্ষম তাদের কে ক্ষারক বলে।

অনুবন্ধী অম্ল-ক্ষারকঃ এখন, `HCl` ও `NH_3` এর মধ্যে বিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা যাকঃ

`HCl + NH_3 \rightarrow NH_4^+   +  Cl^- `
 
এখানে, `HCl` একটি প্রোটন দান করেছে অতএব `HCl`একটি এসিড। প্রোটন দান করার পর `HCl` হতে উৎপন্ন `Cl^-` কিন্তু প্রোটন গ্রহনে সক্ষম। অতএব `HCl` হতে উৎপন্ন `Cl^-` একটি ক্ষার। সুতরাং আমরা বলতে পারি, এসিড সমুহ প্রোটন দান করার পর ক্ষারকে পরিনত হয়। এই ক্ষারকে ঐ এসিডের অনুবন্ধী ক্ষারক বলে।
একইভাবে, কোন ক্ষারক প্রোটন গ্রহন করার পর এসিডে পরিনত হয়।এই এসিড কে ঐ ক্ষারকের অনুবন্ধী এসিড বলে।

উপরের বিক্রিয়ায়, `Cl^- ` হচ্ছে `HCl` এর অনুবন্ধী ক্ষারক।এবং,`NH_4^+` হচ্ছে `NH_3` এর অনুবন্ধী এসিড।





No comments

If you have any questions, feel free to ask here. I will try to answer your questions.