Ad beside title

সারফেস ওয়াটারের বিশুদ্ধতার মানদন্ড- Criteria of Purity of Surface Water

 সারফেস ওয়াটারের বিশুদ্ধতার মানদন্ড- Criteria of Purity of Surface Water


জীব জগতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হচ্ছে "পানি"। পানি ছাড়া জীব জগত কল্পনাও করা সম্ভব নয়। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা পানি পেয়ে থাকি। যেমনঃ ভূ-গর্ভস্ত পানি, বৃষ্টির পানি,নদ-নদী, পুকুর,হাওর,সাগর ইত্যাদি। তবে এই সব গুলো উৎস থেকে প্রাপ্ত পানি আমরা ব্যবহার করতে পারিনা। কেননা বিশুদ্ধ পানি যেমন বাচার জন্য অবশ্যক একই ভাবে দূষিত পানি জীবের মৃত্যুর কারন। তাই চাইলেই যে কোন উৎসের পানি ব্যবহার করা যায়না। সাধারনত, ভূ-গর্ভস্ত যে পানি আমরা ব্যবহার করি সেটা প্রায় শতভাগ নিরাপদ(আর্সেনিক পয়জনিং ছাড়া)। কিন্তু সারফেস ওয়াটারের ক্ষেত্রে আমাদের এর বিশুদ্ধতার মান নিশ্চিত হতে হয়। এখন প্রশ্ন হলো সারফেস ওয়াটার কি?

"পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে যে পানি পাওয়া যায় অর্থাৎ, পুকুর-দিঘী, খাল-বিল, নদ-নদী, সাগরের পানিকে সারফেস ওয়াটার বলে"

যেহেতু, সারফেস ওয়াটার ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগে থাকে তাই এতে অনেক সময় অনেক ক্ষতিকর উপাদান দ্রবীভূত বা মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। তাই সারফেস ওয়াটারের বিশুদ্ধতা যাচাই করতে এর কিছু বৈশিষ্ট্য যাচাই করা হয়। সারফেস ওয়াটারের এসকল বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলোঃ

১.খরতাঃ ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম ধাতুর লবন পানিতে দ্রবীভূত থাকলে পানির যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তাকে খরতা বলে। যে পানিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম ধাতুর লবন দ্রবীভূত থাকে তাকে খর পানি বলে। পানির খরতা মূলত দুই প্রকার হয়ঃ

ক. অস্থায়ী খরতাঃ পানিতে `Ca` বা `Mg` এর বাইকার্বনেট লবন (`HCO_3^- `) লবন দ্রবীভূত থাকলে যে খরতার সৃষ্টি হয় তাকে অস্থায়ী খরতা বলে। একে অস্থায়ী বলার কারন হচ্ছে এই খরতা স্থায়ী নয়, খুব সহজেই এই খরতা দূর করা যায়। অস্থায়ী খর পানিকে তাপ দিলে দ্রবীভূত ধাতব বাই-কার্বনেট লবন, কার্বনেট লবনে পরিনত হয় এবং পাত্রের তলদেশে অধঃক্ষিপ্ত হয়, ফলে পানির খরতা দূর হয়।
`Ca^{2+} + 2HCO_3^-  \rightarrow CaCO_3 (s) + CO_2 + H_2O`

খ.স্থায়ী খরতাঃ পানিতে `Ca` , `Mg` বা `Fe`  এর `SO_4^{2-}` বা `Cl^-` এর  লবন দ্রবীভূত থাকলে যে খরতার সৃষ্টি হয় তাকে স্থায়ী খরতা বলে। একে স্থায়ী বলার কারন হচ্ছে এই খরতা তাপ দিয়ে দূর করা যায়না। তবে মামুটিট পদ্ধতিতে এই ক্ষরতা দূর করা সম্ভব।


২.পানির `p^H`: পানিতে দ্রবীভূত `H^+` আয়নের ঋনাত্মক লগারিদমকে(`-log [H^+]`) পানির `p^H` বলে। বিশুদ্ধ পানির `p^H` এর মান 7 । পানি যদি অম্লীয় হয় তবে  `p^H` এর মান 7 থেকে কমে যায়। অপর দিকে পানি ক্ষারীয় হলে এর `p^H` এর মান 7 অপেক্ষা বেশি হয়। অর্থাৎ, পানির `p^H` এর মান যত কম এর অম্লত্ব তত বেশী এবং `p^H` এর মান যত বেশী এর ক্ষারত্ব তত বেশী। নিচে বিভিন্ন ধরনের পানির  `p^H` এর মান দেয়া হলোঃ

i)এসিড দূষিত পানিঃ `p^H` এর মানঃ `2.2-4.8`
ii) মৃদু পানিঃ `p^H` এর মানঃ `5.3 - 7.4`
iii)খর পানিঃ `p^H` এর মানঃ `7.5-8.8`
iv)সমুদ্রের পানিঃ `p^H` এর মানঃ `8.2-9.2`
v)ক্ষার দূষিত পানিঃ `p^H` এর মানঃ `8.5- 9.5`

Criteria of Purity of Surface Water
All rights reserved by- knowledgepediabd.blogspot.com



৩. দ্রবীভূত অক্সিজেন (Dissolved Oxygen বা DO): প্রতি লিটার পানিতে যত মিলিগ্রাম (`mg`) অক্সিজেন `(O_2)` দ্রবীভূত থাকে তাকে পানির DO বা দ্রবীভূত অক্সিজেন বলা হয়। 

পানিতে দ্রবীভূত এই অক্সিজেন পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কেননা পানিতে বাস করা বিভিন্ন জীব এই অক্সিজেন ব্যবহার করে বেচে থাকে।  এই দ্রবীভূত অক্সিজেন পানির বিশুদ্ধতা নির্ধারন করে। যেমন ধরা যাক, কোন নমুনা পানিতে যদি অনেক বেশি জীবানু থাকে তাহলে তারা বেচে থাকার জন্য পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ব্যবহার করবে ফলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান হ্রাস পাবে। অর্থাৎ, DO এর মান কমে যাবে। অতএব, যদি কোন নমুনা পানির DO এর মান স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয় তাহলে বুঝতে হবে যে পানিতে অনেক জীবানু রয়েছে।অর্থাৎ ঐ পানি বিশুদ্ধ নয়।
যে সকল বিষয়ের উপর পানির DO এর মান নির্ভর করে সেগুলো হচ্ছেঃ

i)তাপমাত্রাঃ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্যাস আকারে বাতাসে মিশে যেতে থাকে ফলে DO এর মান হ্রাস পায়।

ii)চাপঃ আমরা জানি পানিতে গ্যাসের দ্রাব্যতা এর উপর প্রযুক্ত চাপের সমানুপাতিক। অর্থাৎ চাপ বৃদ্ধি পেলে পানিতে অধিক পরিমান অক্সিজেন দ্রবীভূত হয় ফলে পানির DO এর মান বৃদ্ধি পায়।

iii)বায়ূ প্রবাহঃ বায়ূ প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে বাতাস সহজে পানিতে দ্রবীভূত হয় ফলে পানির DO এর মান বৃদ্ধি পায়।

iv)জলজ উদ্ভিদঃ পানিতে জলজ উদ্ভিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে উদ্ভিদ হতে নির্গত `O_2` এর পরিমান বৃদ্ধি পায় ফলে পানির `DO` মান বৃদ্ধি পায়।

v)জৈব পদার্থ ও জীবাণুঃ জৈব পদার্থ ও জীবাণু পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ব্যবহার করে ফলে দ্রবীভূত অক্সিজনের পরিমান হ্রাস পায়।


৪. BOD(Biochemical Oxygen Demand of Water): আমরা জানি, ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অনুজীব বিভিন্ন জৈব পদার্থ কে জারিত করে( খেয়ে ফেলে বা পচিয়ে ফেলে)। জৈব পদার্থ কে জারিতে করতে এই অনুজীব গুলো অক্সিজেন ব্যবহার করে।যদি পানিতে জৈব পদার্থ তথা বর্জ্য পদার্থের পরিমান বেশি হয় তাহলে তাদের জারিত করতে অধিক পরিমান অক্সিজেন প্রয়োজন হবে।অতএব কোন নমুনা পানিতে ব্যাকটেরিয়া সহ অন্যান্য অণুজীব কি পরিমান অক্সিজেন ব্যবহার করছে সেটা জানতে পারলেই বুঝা যাবে ঐ পানিতে কি পরিমান  বর্জ্য পদার্থ রয়েছে। অর্থাৎ সংজ্ঞা অনুসারে,

"নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় প্রতি লিটার পানিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ কে জারিত করতে যত মিলগ্রাম অক্সিজেন প্রয়োজন হয় তাকে ঐ নমুনা পানির `BOD` বলে।

পানির `BOD` এর মান বেশি হলে পানি অবিশুদ্ধ।

৫.COD (Chemical Oxygen Demand of Water):  রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা প্রতি এক লিটার পানিতে দ্রবীভূত জৈব ও অজৈব পদার্থকে জারিত করতে যে পরিমান অক্সিজেন প্রয়োজন হয় তাকে ঐ পানির COD বলা হয়। কোন পানির COD এর মান নির্দেশ করে ঐ পানিতে কি পরিমান জৈব ও অজৈব পদার্থ বা দূষক আছে।

৬.TOC(Total Organic Carbon): প্রতি ১ লিটার পানিতে জৈব পদার্থের পরিমান কে Total organic carbon সংক্ষেপে TOC বলে।

৭.TDS(Total Dissolve Solid of Water): প্রতি ১ লিটার পানিতে দ্রবীভূত কঠিন পদার্থের পরিমান কে Total dissolved solid of water সংক্ষেপে TDS বলে। যদি পানির TDS এর মান বেশি হয় তার মানে ঐ পানিতে অনেক কঠিন পদার্থ দ্রবীভূত আছে। অর্থাৎ ঐ পানি বিশুদ্ধ নয়।



No comments

If you have any questions, feel free to ask here. I will try to answer your questions.