গুনগত রসায়নের গুরুত্বপুর্ণ সংজ্ঞা সমুহ- Some important definitions of Qualitative Chemistry
রসায়নের গুরুত্বপুর্ণ
সংজ্ঞা সমুহ(অধ্যায়-গুনগত রসায়ন)-
অণুঃ মৌল বা যৌগের যে ক্ষুদ্রতম কণা ঐ মৌল বা যৌগের বৈশিষ্ট্য
অক্ষুণ্ণ রেখে বিরাজ করে তাকে অণু বলে। যেমনঃ `O_2, H_2O` ইত্যাদি।
পরমাণুঃ মৌলের গাঠনিক একক
কে পরমাণু বলে।একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে অণু গঠিত হয়। যেমনঃ O, N, C ইত্যাদি।
নিউক্লিয়াসঃ পরমাণুর কেন্দ্রে
নিউট্রন ও প্রোটন নিয়ে গঠিত অংশ কে নিউক্লিয়াস বলে। এর আয়তন, পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায়
খুবই নগণ্য কিন্তু পরমাণুর প্রায় সম্পুর্ন ভর ও ধনাত্মক চার্জ ও ভর নিউক্লিয়াসেই কেন্দ্রীভূত
থাকে। নিউক্লিয়াসে যে বন্ধন শক্তি দ্বারা প্রোটন ও নিউট্রন আবদ্ধ থাকে তাকে নিউক্লিয়ার
বন্ধন শক্তি বলে।
(Orbit)শক্তিস্তরঃ নিউক্লিয়াস কে
কেন্দ্র করে যে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ইলেক্ট্রন আবর্তন করে তাকে শক্তিস্তর বলে।
(Orbital)অরবিটালঃ পরমাণুর কক্ষপথে
যে অঞ্চলে ইলেক্ট্রন প্রাপ্তির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তাকে অরবিটাল বলে।
ইলেক্ট্রনঃ ঋনাত্মক চার্জ
বিশিষ্ট স্থায়ী মৌলিক কণিকা যা নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে নির্দ্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন
করে। এর চার্জের মান `-1.6\times10^{-19}` কুলম্ব এবং ভর `9.1085\times10^{-28}` g।একে e দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
প্রোটনঃ ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট
স্থায়ী মৌলিক কণিকা যা নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে। এর চার্জের মান `1.6\times10^{-19}` কুলম্ব এবং ভর `1.672\times10^{-24}` g। অর্থাৎ, ইলেক্ট্রন ও প্রোটনের চার্জ সমান
কিন্তু বিপরীত। প্রোটন কে P দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
নিউট্রনঃ চার্জহীন স্থায়ী
মৌলিক কণিকা যা নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে। এর ভর `1.675\times10^{-24}` g যা প্রায়
প্রোটনের ভরের সমান। নিউট্রন কে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
পারমাণবিক সংখ্যাঃ কোন মৌলের পরমাণুর
নিউক্লিয়াসে অবস্থিত প্রোটন সংখ্যা কে ঐ মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা বলা হয়।যেহেতু স্বাভাবিক
অবস্থায় পরমাণুতে প্রোটন সংখ্যার সমান সংখ্যক ইলেক্ট্রন থাকে তাই পারমাণবিক সংখ্যা,
ইলেক্ট্রন সংখ্যা ও নির্দেশ করে।
ভর সংখ্যাঃ পরমাণুর নিউক্লিয়াসে
অবস্থিত প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার সমষ্টি কে ঐ মৌলের ভর সংখ্যা বলে। কোন মৌলের ভর সংখ্যা
হতে পারমাণবিক সংখ্যা বাদ দিলে এর নিউট্রন
সংখ্যা জানা যায়।
আপেক্ষিক পারমাণবিক ভরঃ কোন মৌলের একটি
পরমাণুর ভরকে, কার্বন-12 আইসোটোপের ভরের 12 ভাগের 1 ভাগ দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া
যায় তাকে ঐ মৌলের আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর বলে।
আইসোটোপঃ যদি একাধিক পরমাণুর প্রোটন
সংখ্যা( পারমাণবিক সংখ্যা) সমান কিন্তু ভর সংখ্যা (নিউট্রন সংখ্যা) ভিন্ন হয় তবে তাদের
কে একে অপরের আইসোটোপ বলা হয়। যেমনঃ`\[O_8^{16},O_8^{17}, O_8^{18}\]` এরা প্রত্যেকেই অক্সিজেনের আইসোটোপ। এখানে প্রতিটি পরমাণুর
পারমাণবিক সংখ্যা 8 কিন্তু ভর সংখ্যা যথাক্রমে 16,17 ও 18 । অর্থাৎ, এদের নিউট্রন সংখ্যা
যথাক্রমে 16-8=8, 17-8=9 ও 18-8=10 ।
আইসোটোনঃ যদি একাধিক পরমাণুর
নিউট্রন সংখ্যা সমান কিন্তু ভর সংখ্যা ভিন্ন হয় তবে তাদের কে একে অপরের আইসোটোন বলে।
যেমনঃ `Cl_{17}^{37}, K_{19}^{39}` এরা একে অপরের আইসোটোন।
এখানে পরমাণুদ্বয়ের পারমাণবিক সংখ্যা যথাক্রমে 17 ও 19 এবং ভর সংখ্যা যথাক্রমে 37 ও
39 । কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা 37-17=20 এবং 39-19=20, অর্থাৎ উভয় পরমাণুর নিউট্রন সংখ্যা
সমান।
আইসোবারঃ যদি একাধিক পরমাণুর
ভর সংখ্যা সমান কিন্তু প্রোটন সংখ্যা ভিন্ন হয় তবে তাদের কে একে অপরের আইসোবার বলে।
Image source-Google | Image by- Suwit Ngaokaew |
তেজস্ক্রিয়তাঃ ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস
ভেঙে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে আলফা,বিটা ও গামা রশ্মি নির্গত হবার প্রক্রিয়াকে তেজস্ক্রিয়তা
বলে এবং এ রশ্মি গুলোকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বলে।
আলফা (α) রশ্মিঃ আলফা কণা তথা হিলিয়াম
নিউক্লিয়াস এর প্রবাহ কে আলফা রশ্মি বলে।এর চার্জ +2
এবং ভর 4 একক। কোন মৌল থেকে আলফা রশ্মি বিকিরিত
হলে এর চার্জ 2 একক হ্রাস পায় এবং পারমানবিক সংখ্যা 2 একক হ্রাস পেয়ে নতুন মৌলে পরিনত
হয়। যেমনঃ রেডিয়াম থেকে আলফা রশ্মি বিকিরনের পর তা পরিবর্তিত হয়ে রেডন উৎপন্ন হয়।
`Ra_{88}^{226}-He_2^4\rightarrow Rn_{86}^{222}`
বিটা(β) রশ্মিঃ বিটা রশ্মি হলো
ইলেক্ট্রন (-1e0) কণার প্রবাহ।এর চার্জ -1 এবং ভর শূন্য। এর
ভেদন ক্ষমতা অনেক বেশী। কোন মৌল থেকে বিটা রশ্মি নির্গত হলে এর চার্জ 1 একক বৃদ্ধি
পাবে ফলে এর পারমাণবিক সংখ্যা 1 একক বৃদ্ধি পেয়ে নতুন মৌলে রূপান্তরিত হবে। যেমনঃ
অ্যাক্টিনিয়াম থেকে বিটা রশ্মি নির্গত হয়ে
তা থোরিয়ামে পরিনত হয়।
গামা (γ) রশ্মিঃ গামা রশ্মি হলো
এক্স-রে এর মতো এক ধরনের তড়িৎ চুম্বকীয় রশ্মি। এটি চার্জ ও ভরহীন তাই এর ভেদন ক্ষমতা
অত্যাধিক বেশি।
নিউক্লিয়ার বিক্রিয়াঃ উচ্চ গতি সম্পন্ন কণা বা নিউক্লিয়াস অপর কোন নিউক্লিয়াস
কে আঘাত করলে উক্ত নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটে এবং নতুন এক বা একাধীক নতুন মৌল উৎপন্ন
হয় ।এই প্রক্রিয়াকে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া বলে।একে নিউক্লিয়ার ট্রান্সমুটেশন বিক্রিয়া
ও বলা হয়। যেমনঃ অ্যালুমিনিয়াম পরমাণুকে উচ্চগতি সম্পন্ন হিলিয়াম পরমাণু দ্বারা আঘাত
করলে তা ফসফরাস পরমাণুতে পরিণত হয় এবং একটি নিউট্রন নির্গত হয়।
নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়াঃ তুলনামূলক কম ভর
বিশিষ্ট একাধিক নিউক্লিয়াস মিলিত হয়ে একটি ভারী নিউক্লিয়াস গঠিত হবার প্রক্রিয়া কে
নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া বলে। এই বিক্রিয়ায় বিপুল পরিমান শক্তি নির্গত হয়। যেমনঃ
হাইড্রজেনের দুটি আইসোটোপ ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম মিলিত হয়ে হিলিয়াম গঠন করে এবং এখান
থেকে বিপুল পরিমান শক্তি নির্গত হয়।
সূর্য এবং হাইড্রোজেন বোমায় এই প্রক্রিয়ায়
শক্তি উৎপন্ন হয়।
নিউক্লিয়ার ফিশনঃ উচ্চগতি সম্পন্ন
কোন কণার আঘাতে তুলনামূলক ভারী নিউক্লিয়াস ভেঙে কাছাকাছি ভরের একাধিক নিউক্লিয়াস উৎপন্ন
হবার প্রক্রিয়াকে নিউক্লিয়ার ফিশন বলে। যেমনঃ উচ্চগতি সম্পন্ন নিউট্রন, ইউরেনিয়াম পরমাণুকে
আঘাত করলে ক্রিপটন (Kr) ও বেরিয়াম (Ba) উৎপন্ন হয়।
Thank you.
ReplyDelete