তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্র(First law of Thermodynamics)
তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্র(First law of Thermodynamics)
ধরাযাক A ও B দুটি বস্তু। A তে 100 জুল তাপশক্তি এবং B তে 80 জুল তাপশক্তি সঞ্চিত আছে। A এর তাপমাত্রা 20 C এবং B বস্তুর তাপমাত্রা 30 C । এখন A ও B বস্তুকে একে অপরের সংস্পর্শে আনলে B বস্তু থেকে A বস্তুতে তাপ সঞ্চালিত হবে। যদিও A বস্তুতে সঞ্চিত তাপ শক্তির মান বেশি, কিন্তু B বস্তুর তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় তাপের সঞ্চালন B থেকে A এর দিকেই হবে।
তাপ যেহেতু এক প্রকার শক্তি তাই এর একক জুল।অপর দিকে তাপমাত্রার বিভিন্ন একক রয়েছে যেমন সেলসিয়াস(C), কেলভিন(K), ফারেনহাইট(F)।
দুটি ভিন্ন তাপমাত্রার বস্তুকে পরস্পরের সংস্পর্শের আনলে উচ্চতাপমাত্রা বস্তু হতে নিম্ন তাপমাত্রার বস্তুতে তাপ স্থানান্তঅরিত হয়। তাপের এই সঞ্চালন ততক্ষন চলতে থাকে যতক্ষন এদের তাপমাত্রার পার্থক্য বজায় থাকে। বস্তুদ্বয়ের তাপমাত্রা সমান হয়ে গেলে এই সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। একে তাপীয় সমতা বলে। একে তাপগতিবিদ্যার শূন্যতম সূত্র বলা হয়।
তাপগতিবিদ্যা নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। যেমনঃ
১.সিস্টেমঃ সিস্টেম বলতে মূলত 'তাপীয় সিস্টেম' কে বুঝায়। কোন বেষ্টনি দ্বারা আবদ্ধ একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল কে সিস্টেম বলা হয়। সহজ ভাবে বললে, কোন বস্তু এবং এর পারিপার্শিক অঞ্চল নিয়ে সিস্টিম গঠিত হয়।
যেমনঃ একটি সিলিন্ডারে যদি কিছু পরিমান গ্যাস রাখা হয় তাহলে ঐ গ্যাস সহ সম্পূর্ন সিলিন্ডার টি একটি সিস্টেম।
আবার, একটি ঘরে বা কক্ষে যদি এক টুকরো বরফ রাখা হয় তাহলে ঐ বরফ সহ সম্পূর্ণ কক্ষকেই সিস্টেম হিসেবে ধরা হবে।
তাপগতি বিদ্যায় মূলত ৩ ধরনের সিস্টেম নিয়ে আলোচনা করা হয়। যথাঃ
i. উন্মুক্ত সিস্টেম (Open system): যে সিস্টেমে বস্তু তার পরিবেশের সাথে ভর অ তাপ দুটোই বিনিময় করতে পারে তাকে উন্মুক্ত সিস্টেম বলে। কোন কক্ষে এক টুকরো বরফ রাখা হলে তা একটি উন্মুক্ত সিস্টেম। কেননা এক্ষেত্রে বরফ পরিবেশ থেকে তাপ শোষণ করে তরলে পরিনত হবে একই সাথে কিছু পরিমান জলীয়বাষ্প জমা হয়ে এর আয়তন ও বৃদ্ধি করবে।
ii. বদ্ধ সিস্টেম(Closed System): যে সিস্টেমে বস্তু তার পরিবেশের সাথে শুধুমাত্র তাপের বিনিময় করতে পারে, ভর বিনিময় করতে পারেনা তাকে বদ্ধ সিস্টেম বলে। "পিস্টন যুক্ত সিলিন্ডারে আবদ্ধ গ্যাস" বদ্ধ সিস্টেমের উদাহরণ। এক্ষেত্রে সিলিন্ডার তাপ সুপরিবাহী হওয়ায় গ্যাস এর পরিবেশের সাথে তাপ বিনিময় করতে পারে। কিন্তু সিলিন্ডার টি পিষ্টন দ্বারা আবদ্ধ থাকায় ভর বিনিময় সম্ভব হয়না।
iii. বিচ্ছিন্ন সিস্টেম(Isolated System): যে সিস্টেমে বস্তু তার পরিবেশের সাথে তাপ বা ভর কোনটি ই বিনিময় করতে পারেনা তাকে বিচ্ছিন্ন সিস্টেম বলে। ‘ফ্লাক্সে রাখা চা’ বিচ্ছিন্ন সিস্টেমের একটি উদাহরণ।যদিও এক্ষেত্রে সামান্য পরিমান তাপের আদান-প্রদান ঘটে।
২. অন্তঃস্থ শক্তিঃ কোন বস্তুর অনু-পরমাণুর মধ্যে যে শক্তি সঞ্চিত থাকে তাকে ঐ বস্তুর অন্তঃস্থ শক্তি বলে। এই শক্তির উদ্ভব ঘটে অণু সমুহের কম্পন, বন্ধনশক্তি ও গঠন বিন্যাস থেকে। এই অন্তঃস্থ শক্তি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে।
৩.সম্পাদিত কাজঃ কোন গ্যাসকে তাপ দিলে বা হ্রাস করলে এর আয়তন পরিবর্তন হয়। একেই আয়তন পরিবর্তন জনীত কাজ বলা হয়।
তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্রঃ তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্র তাপ এবং সম্পাদিত কাজের মধ্যেসম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করে। তাপগতি বিদ্যার ১ম সুত্রটি নিম্নরূপঃ
“তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করলে বা যান্ত্রিক শক্তিকে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করলে তাপ শক্তি ও যান্ত্রিক শক্তি একে অপরের সমানুপাতিক হবে”
অর্থাৎ, W পরিমাণ কাজ করায় যদি Q পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয় তবে,
W∝Q
⇒W=JQ ---------(1)
এখানে J হচ্ছে জুলের ধ্রবক ।একে তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক ও বলা হয়।
উপরের সমীকরনে W=1 এবং Q=1 হলে J=1 হয়। অর্থাৎ,
“১ একক তাপশক্তি উৎপন্ন করতে যে পরিমান কাজ করতে হয় তাকে তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক বলে”
তবে বিজ্ঞানী ক্লাসিয়াস তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্রকে আরো সুনির্দিষ্ট ভাবে উপস্থাপন করেন। তাঁর মতেঃ
“ কোন বস্তুতে তাপ প্রয়োগ করা হলে এর একটি অংশ বস্তুটির অভ্যন্তরীন শক্তি বৃদ্ধি করে এবং অবশিষ্ট অংশ এর বাহ্যিক কাজ সম্পাদনে ব্যয় হয়”
![]() |
Rudolf Clausius Image source- Google | Image by- pinterest.com |
অর্থাৎ, কোন বস্তুতে dQ পরিমান তাপ দিলে যদি এর অন্তঃস্থ শক্তির পরিবর্তন dU এবং সম্পাদিত বাহ্যিক কাজ dW হয় তবে ,
dQ=dU+dW
ইহাই তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্রের গানিতিক রূপ।
এখন ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় এই সূত্রের পরিবর্তীত রূপ
নিয়ে আমরা আলোচনা করবো।
সমোষ্ণ প্রক্রিয়াঃ যে প্রক্রিয়ায় সিস্টেম তার পারিপার্শিকের
সাথে তাপ আদান-প্রদান করে ফলে সিস্টেমের চাপ ও আয়তনের পরিবর্তন ঘটে কিন্তু তাপমাত্রার
কোন পরিবর্তন ঘটেনা তাকে সমোষ্ণ প্রক্রিয়া বলে।
ধরাযাক, কোন সিস্টেমে dQ পরিমান তাপ দেয়ায় এর আয়তন dV
পরিমান বৃদ্ধি পায়। সিস্টেমের চাপ P হলে, আয়তন সম্প্রসারণের ফলে সম্পাদিত কাজ,
⇒W= চাপ × আয়তন প্রসারণ
⇒W=PdV
আবার, তাপমাত্রা স্থির থাকায় অভ্যন্তরীন শক্তির পরিবর্তন dU=0
তাহলে তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র হতে পাই,
⇒dQ=dU+dW
⇒dQ=0+PdV
⇒dQ=PdV
এটাই সমোষ্ণ প্রক্রিয়ায় তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্রের পরিবর্তীত
রূপ।
রূদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়াঃ যে প্রক্রিয়ায় সিস্টেম কোন তাপ
শোষণ বা বর্জন করেনা অর্থাৎ তাপের আদান-প্রদান ঘটেনা তাকে রূদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া বলে।
অর্থাৎ, এই প্রক্রিয়ায় গৃহীত বা বর্জিত তাপ dQ=0। তাহলে
তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্র হতে পাই,
0=dU+dW
⇒dW=-dU
অতএব, রূদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়ায় আয়তন বৃদ্ধি পেলে অভ্যন্তরীন
শক্তি হ্রাস পায়।বিপরীত ভাবে, অভ্যন্তরীন শক্তি বৃদ্ধি পেলে আয়তন হ্রাস পায়।
স্থির আয়তন প্রক্রিয়াঃ যে প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের আয়তনের কোন পরিবর্তন হয়না অর্থাৎ আয়তন স্থির থাকে তাকে স্থির আয়তন প্রক্রিয়া বলে। এই প্রক্রিয়ায় আয়তন পরিবর্তন dV=0। অতএব তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্র হতে পাই,
dQ=dU+PdV
⇒dQ=dU+P.0
⇒dQ=dU+0
⇒dQ=dU
ইহাই স্থির আয়তনে তাপগতিবিদ্যার ১ম সূত্রের পরিবর্তীত রূপ।
Post a Comment