পরমাণুর মডেল- Model of the Atom
পরমাণুর মডেল- Model of the Atom
পদার্থের গঠন সম্পর্কে আমরা এখন যা জানি
হাজার বছর পূর্বে কিন্তু ধারণা টা এমন ছিলনা। বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের
মতে পদার্থের কোন গাঠনিক একক নেই, পদার্থ নিরবিচ্ছিন্ন। অর্থাৎ অণু-পরমাণু নামে যে
কণিকা আমরা চিনি তার অস্তিত্ব অ্যারিস্টটলের মতবাদে ছিলনা। কিন্তু তৎকালীন সময়ের দুজন
দার্শনিক লুসিপাস ও ডেমোক্রিটাস, অ্যারিস্টটলের মতবাদের বিরোধিতা করেন। তাদের মতবাদ
অনুযায়ী প্রত্যেক পদার্থ অবিভাজ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণিকা দিয়ে গঠিত। যদিও অ্যারিস্টটলের
প্রভাবে এই মতবাদ তৎকালীন সময়ে গ্রহনযোগ্যতা পায়নি। এর বহু বছর পর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী
জন ডাল্টন পরমাণুর গঠন সম্পর্কে তার বিখ্যাত মডেল টি প্রণয়ন করেন ফলে অণু-পরমাণুর ধারণা
পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
Image Source- Google| Image by- Science Museum Group Collection |
ডাল্টনের পরমাণু মডেলঃ ডাল্টনের পরমাণু
মডেল অনুসারে-
১. প্রতিটি পদার্থ অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম কণা
দ্বারা গঠিত।তিনি এই ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন পরমাণু।
২. একই পদার্থের প্রতিটি পরমাণুর ভর, প্রকৃতি
অভিন্ন।
৩. পরমাণু সৃষ্টি বা ধবংস করা যায়না।
৪. কেবলমাত্র পরমাণুর সমূহ ই বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন
করতে পারে।
ডাল্টনের মডেলের ত্রুটি সমূহঃ
১. ডাল্টনের মতে পরমাণু সমুহ অবিভাজ্য।
কিন্তু আমরা জানি পরমাণুর সমূহ ইলেক্ট্রন,প্রোটন ও নিউট্রন নামক কণা দ্বারা গঠিত।
২. এই মতবাদ অনুসারে একই পদার্থের সকল পরমাণুর
ভর একই হবার কথা। কিন্তু একই পদার্থের ভিন্ন ভিন্ন ভর বিশিষ্ঠ পরমাণু পাওয়া যায়,এদের
আইসোটোপ বলে। আবার ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের পরমাণুর ভর ভিন্ন হবার কথা থাকলেও প্রকৃতিতে
একই ভর বিশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের পরমাণু পাওয়া যায়।
যদিও জন ডালটনের মডেলে কিছু ত্রুটি ছিল,
কিন্তু তার এই মডেল ই আমাদের পদার্থের গঠন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। আর এজন্যই জন
ডাল্টন কে পরমাণুবাদের জনক বলা হয়।
পদার্থের গঠন সম্পর্কিত মডেল প্রতিষ্ঠিত
হবার পর বিজ্ঞানীরা পরমাণুর গঠন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরমাণু গঠন সম্পর্কিত
মডেল গুলোর মধ্যে রাদারফোর্ড ও বোর পরমাণু মডেল অন্যতম।
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলঃ রাদারফোর্ডের পরমাণু
মডেলের স্বীকার্য গুলো নিম্নরূপ-
১. পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস নামক একটি
ভারী বস্তু বিদ্যমান যাতে পরমাণুর প্রায় সম্পূর্ণ ভর ও ধনাত্মক চার্জ কেন্দ্রীভূত থাকে।
২.সৌরজগতের গ্রহ সমূহের মত পরমাণুতে ইলেক্ট্রন
সমুহ নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে আবর্তন করে।
৩.নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জের সমান সংখ্যক
ইলেক্ট্রন নিউক্লিয়াসের চার দিকে আবর্তন করে। এজন্যই পরমাণু স্বাভাবিক অবস্থায় চার্জ
নিরপেক্ষ।
৪. ধনাত্মক নিউক্লিয়াস ও ঋনাত্মক ইলেক্ট্রনের
মধ্যে স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বল এবং ইলেক্ট্রনের ঘূর্নণ জনিত কারণে উৎপন্ন কেন্দ্র বিমূখীবল
পরস্পর সমান।
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতাঃ
১. এই মডেলে ইলেক্ট্রন সমুহ কে গ্রহের সাথে
তুলনা করা হয়েছে যা অযৌক্তিক। কেননা ইলেক্ট্রন ঋনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট হলেও গ্রহ সমুহ
চার্জহীন।
২. ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বানুসারে কোন চার্জিত
বস্তু বৃত্তাকার পথে আবর্তন করতে থাকলে তা ধীরে ধীরে শক্তি হারাবে এবং এর কক্ষপথের
ব্যাসার্ধ হ্রাস পেতে থাকবে। অতএব এ তত্ত্বানুসারে পরমাণুতে ইলেক্ট্রন আবর্তন করতে
করতে এক পর্যায়ে নিউক্লিয়াসের সাথে মিলে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়না।
৩. ইলেক্ট্রনের আবর্তনের কক্ষপথের আকার-আকৃতি সম্পর্কে
কোন স্পষ্ট ধারণা এই মডেলে পাওয়া যায়না।
৪.একাধিক ইলেক্ট্রন বিশিষ্ট পরমাণুতে ইলেক্ট্রন
গুলো কিভাবে আবর্তন করবে তার বর্ণনা এই মডেলে নেই।
৫. পরমাণুর বর্ণালী সম্পর্কিত সুষ্ঠু ব্যাখ্যা
এই মডেলে নেই।
Image Source- Google| Image by- frcrphysicsnotes |
রাদার্ফোডের মডেলের এই ত্রুটি সমূহ সংশোধন করে একটি আধুনিক ও গ্রহনযোগ্য মডেল প্রদানে এগিয়ে আসেন তারই ছাত্র নীলস বোর।
নীলস বোর এর পরমাণু মডেলঃ নীলস বোর
এর পরমাণু মডেল টি নিম্নরূপ-
১.ইলেক্ট্রন সমুহ নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র
করে নির্দিষ্ট শক্তির বৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করে। এ অবস্থায় ইলেক্ট্রন কোন শক্তি
শোষণ বা বিকিরন করেনা। এই কক্ষপথ কে শক্তিস্তর বা অরবিট বলা হয়।
২. কক্ষপথে আবর্তনরত কোন ইলেক্ট্রনের কৌণিক বেগ হবে `h/(2\pi)`এর পূর্ণ সংখ্যার গুণিতক। অর্থাৎ m ভর বিশিষ্ট কোন ইলেক্ট্রন n তম কক্ষপথে v বেগে অবর্তন করলে এর কৌণিক ভরবেগ `mvr = (nh)/(2π)`
এখানে h= প্লাংকের ধ্রবক, r= কক্ষপথের ব্যাসার্ধ।
৩. ইলেক্ট্রন নিম্নশক্তিস্তর থেকে উচ্চ শক্তিস্তরে
গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি শোষণ করবে। বিপরীতভাবে উচ্চশক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে
নেমে আসলে ইলেক্ট্রন নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি বিকিরণ করবে। এই শোষিত বা বিকিরিত শক্তির
পরিমাণ হবে ঐ কক্ষপথদ্বয়ের শক্তির পার্থক্যের সমান।
অর্থাৎ, কোন ইলেক্ট্রন ১ম শক্তিস্তর থেকে ২য় শক্তিস্তরে আসলে এর শোষিত শক্তির পরিমাণ
এই শোষিত বা বিকিরিত
শক্তি তড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ আকারে নির্গত হয়। এই তরঙ্গের কম্পাঙ্কের মান দৃশ্যমান আলোর
কম্পাঙ্কের সমান হলে তা বর্নালী আকারে আমাদের চোখে ধরা দেয়।
বোর পরমাণু মডেলের
সীমাবদ্ধতাঃ
১. বোর পরমাণু মডেলের
সাহায্যে এক ইলেক্ট্রন বিশিষ্ট পরমাণু বা আয়ন (যেমনঃ H, He+,
Li2+) এর বর্ণালী ব্যাখ্যা করা গেলেও একাধিক ইলেক্ট্রন
বিশিষ্ট পরমাণু বা আয়নের বর্নালির ব্যাখ্যা করা যায়না।
২. বোর পরমাণু মডেল
অনুসারে ইলেক্ট্রন এক কক্ষপথ থেকে অন্য কক্ষপথে স্থানান্তরের সময় বর্নালীতে একটি রেখা
থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে একাধিক রেখা দেখা যায়।
৩.এই মডেল অনুসারে
আবর্তনরত ইলেক্ট্রনের ভরবেগ ও অবস্থান নির্দিষ্ট ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। কিন্তু হাইজেনবার্গের
অনিশ্চয়তা নীতি থেকে আমরা জানি, গতিশীল বস্তুর অবস্থান ও ভরবেগ একই সাথে নির্ভুল ভাবে
নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
Post a Comment