Ad beside title

পর্যায় সারণিতে মৌল সমূহের আকার, আয়নিকরণশক্তি, ইলেক্ট্রন আসক্তি এবং তড়িৎ ঋনাত্মকতার তুলনা-Comparison of elements size, ionization, electron addiction and electronegativity in periodic table

 পর্যায় সারণিতে মৌল সমূহের আকার, আয়নিকরণশক্তি, ইলেক্ট্রন আসক্তি এবং তড়িৎ ঋনাত্মকতার তুলনা-Comparison of elements size, ionization, electron addiction and electronegativity in periodic table

পর্যায় সারণিতে মৌলের আকারের তুলনাঃ 
মৌল সমূহের আকার নির্ভর করে এর পারমাণবিক সংখ্যা এবং কক্ষপথের সংখ্যার উপর। কক্ষপথ বৃদ্ধির সাথে সাথে পরমাণুর আকার বৃদ্ধি পায়। আবার একই কক্ষপথে ইলেক্ট্রন সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পরমাণুর আকারের পরিবর্তন ঘটে। নিচে `H , He, Li, Be, B` এর ইলেক্ট্রন বিন্যাস নিয়ে আলোচনা করা যাক-

`H(1) \rightarrow 1s^1`

`He(2) \rightarrow 1s^2`

`Li(3) \rightarrow 1s^2 2s^1`

`Be(4) \rightarrow 1s^2 2s^2`

`B(5) \rightarrow 1s^2 2s^2 2p^1 `

উপরের ইলেক্ট্রন বিন্যাসে দেখা যাচ্ছে `H` ও `He` এর ইলেক্ট্রন বিন্যাসে ১টি করে কক্ষপথ এবং `Li, Be, B` এর ইলেক্ট্রন বিন্যাসে দুটি করে কক্ষপথ রয়েছে। যেহেতু কক্ষপথ বৃদ্ধির সাথে সাথে নিউক্লিয়াস হতে সর্বশেষ কক্ষপথের দূরত্ব বৃদ্ধি পায় তাই পরমাণুর আকার ও বৃদ্ধি পায়।অর্থাৎ `H` ও `He` এর তুলনায় `Li, Be, B` আকারে বড়।
এখন `H` ও `He` এর আকারের তুলনা করা যাক। আমরা জানি একই পর্যায়ে পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সংখ্যা এবং কক্ষপথে ইলেক্ট্রন সংখ্যা বৃদ্ধি পায় কিন্তু কক্ষপথ বা শক্তিস্তরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়না। ফলে সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেক্ট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষন বৃদ্ধি পায় ।সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেক্ট্রনের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধির ফলে সর্বশেষ কক্ষপথ নিউক্লিয়াসের দিকে সংকুচিত হয় অর্থাৎ আকার হ্রাস পায়। অর্থাৎ একই পর্যায়ের অবস্থিত মৌল সমূহের পারমাণবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এদের পারমাণবিক ব্যাসার্ধ তথা আকার হ্রাস পায়।যেহেতু `H` ও `He` একই পর্যায়ে অবস্থিত এবং `H` এর তুলনায় `He` এর পারমাণবিক সংখ্যা বেশি তাই `H` এর তুলনায়  `He` আকারে ছোট। সুতরাং `H gt He` ।

আবার `Li, Be, B` প্রত্যেকেই পর্যায় সারণির ২য় পর্যায়ে অবস্থিত এবং এদের পারমাণবিক সংখ্যা যথাক্রমে ৩,৪ ও ৫। যেহেতু এরা একই কক্ষপথে অবস্থিত তাই পারমাণবিক সংখ্যা বৃধির সাথে সাথে এদের আকার বা পারমাণবিক ব্যাসার্ধ হ্রাস পাবে।সুতরাং এদের আকারের ক্রম হবে, ` Li gt Be gt B` .
এখন `H` এবং `Li` ইলেক্ট্রন বিন্যাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই উভয়ের সর্বশেষ ইলেক্ট্রন `s` অরবিটালে অবস্থিত এবং এই `s` অরবিটালে ইলেক্ট্রন সংখ্যা ১। সুতরাং এরা উভয়েই গ্রুপ- 1 অবস্থিত। কিন্তু `H` এর ইলেক্ট্রন বিন্যাসে ১টি কক্ষপথ এবং `Li`  এর ইলেক্ট্রন বিন্যাসে ২ টি কক্ষপথ রয়েছে। অর্থাৎ `Li` এর আকার `H`  এর তুলনায় বড় বা `Li gt H` .

অতএব সার্বিক ভাবে তুলনা করেলে আমরা পাই, `Li gt Be gt B gt H gt He` । 

উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি একই পর্যায়ে বাম থেকে ডানে গেলে পরমাণুর আকার হ্রাস পায় এবং একই গ্রুপে উপর থেকে নিচে গেলে পরমাণুর আকার বৃদ্ধি পায়।

Comparison of elements size, ionization, electron addiction and electronegativity in periodic table
All rights reserved by knowledgepediabd.blogspot.com


পর্যায় সারণিতে মৌলের আয়নীকরণ শক্তির তুলনাঃ

আয়নীকরণ শক্তিঃ সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, কোন পরমাণুকে ধনাত্মক আয়নে রূপান্তরিত করতে যে শক্তির প্রয়োজন হয় তাকে আয়নীকরণ শক্তি বলে। অর্থাৎ সঙ্গানুসারে, 

এক মোল কোন পরমাণুর সর্বশেষ কক্ষপথ থেকে ১ মোল ইলেক্ট্রন অপসারন করে ১ মোল ধনাত্মক আয়ণ উৎপন্ন করতে প্রয়োজনীয় শক্তি কে ঐ মৌলের আয়নীকরণ শক্তি বলে।

আয়নীকরণ শক্তির মান নির্ভর করে সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেক্ট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষনের উপর। সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেক্ট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষন যত বেশী থাকবে ঐ ইলেক্ট্রন কে উপসারণ করতে তত বেশী শক্তির প্রয়োজন হবে,অর্থাৎ আয়নীকরণ শক্তির মান বৃদ্ধি পাবে। এই আকর্ষন নির্ভর করে নিউক্লিয়াসের চার্জ এবং নিউক্লিয়াস হতে সর্বশেষ কক্ষপথের দূরত্ব তথা পারমাণবিক ব্যাসার্ধের উপর। 
আমরা জানি একই কক্ষপথে বাম থেকে ডানে গেলে পারমানবিক সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে পারমাণুর আকার হ্রাস পায়,ফলে সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেক্ট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ আয়নীকরণ শক্তির মান বৃদ্ধি। 
আবার, একই গ্রুপে উপর থেকে নিচে নামলে পরমাণুর ইলেক্ট্রন বিন্যাসে একটি করে কক্ষপথ বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে পরমানুর আকার বৃদ্ধি পায় এবং সর্বশেষ কক্ষপথের ইলেক্ট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষন হ্রাস পায়। অর্থাৎ আয়নীকরণ শক্তির মান হ্রাস পায়।
অতএব আমরা বলতে পারি, একই পর্যায়ে বাম থেকে  ডানে গেলে আয়নীকরণ শক্তির মান বৃদ্ধি পায় এবং একই গ্রুপে উপর থেকে নিচের দিকে আয়নীকরণ শক্তির মান হ্রাস পায়। সহজ ভাবে বলতে গেলে , পরমাণুর আকার বৃদ্ধির সাথে সাথে আয়নীকরণ শক্তির মান হ্রাস পায়।

এখন উপরের মৌল গুলোর আয়নীকরণ শক্তির তুলনা করে আমরা লিখতে পারি,

`Li lt Be lt B lt H lt He` 

ব্যাতিক্রমঃ আমরা জানি যেকোন অর্বিটাল অর্ধপূর্ণ বা পূর্ণ কাঠামোতে অধিক স্থিতিশীল হয়। অর্থাৎ `s^1 ,p^3, d^5` এবং `s^2, p^6, d^10` কাঠামো অধিক স্থিতিশীল। এই স্থিতিশীল কাঠামো থেকে ইলেক্ট্রন অপসারণ করতে তুলনামূলক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়।অর্থাৎ কোন মৌলের ইলেক্ট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ অর্বিটাল অর্ধপূর্ণ বা পূর্ণ থাকলে এর আয়নীকরণ শক্তির মান তুলনামূলক বেশী হয়। যেমন `N` ও `O` এর আয়নীকরণ শক্তির তুলনা করা যাক,
`N(7) \rightarrow 1s^2 2s^2 2p^3`
`O(8) \rightarrow 1s^2 2s^2 2p^4`

আমরা জানি `N` ও `O` একই পর্যায়ে অবস্থিত এবং  `O` এর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ `N` এর তুলনায় কম। অতএব স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে `O` এর আয়নীকরণ শক্তি বেশী হবার কথা। কিন্তু এদের ইলেক্ট্রন বিন্যাসে দেখা যায়, `N` এর ইলেক্ট্রন বিন্যাসের সর্বশেষ কক্ষপথে `p` অরবিটাল অর্ধপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে যা অধিক স্থিতিশীল।অপরদিকে `O`  এর সর্বশেষ কক্ষপথে `p` অরবিটালে ৪টি ইলেক্ট্রন রয়েছে অর্থাৎ `p` অর্বিটাল অর্ধপূর্ণ বা অসম্পূর্ণ নয়। তাই `N` এর কাঠামো `O` এর কাঠামো থেকে অধিক স্থিতিশীল। তাই `N` এর আয়নীকরণ শক্তির মান `O` অপেক্ষা বেশী।


No comments

If you have any questions, feel free to ask here. I will try to answer your questions.