সূর্য বৃত্তান্ত
সূর্যঃ
সুর্য,
মহাকাশের
বিলিওয়ন বিলিয়ন স্টারের মধ্যে মাঝারি আকারের একটি স্টার(তারকা)
| গঠনগত দিক দিয়ে এটি প্রায় অন্যসব স্টার এর মত হলেও আমাদের কাছে কিন্তু এটি সাধারন নয়।
অনেকেই
আমরা একে আদর করে সূর্যি মামা ডাকি।
আমাদের
অতিপ্রিয় এই সূর্যের নানা জানা-অজানা তথ্য নিয়েই আজকের আয়োজন।
আমাদের সূর্য একটি G-type main sequence বা G dwarf star (বামন তারা)। অন্যান্য বামন তারা মতো এর রং ও কিন্তু সাদা।হ্যা ঠিক ই পড়েছেন, এর রং সাদা। তাহলে একে হলুদ দেখায় কে্ন? সূর্য কে হলুদ দেখায় আমাদের পৃথিবীর বায়ু মন্ডলের জন্য। সূর্যের আলো বায়ুমন্ডল দিয়ে প্রবেশের সময় প্রতিসরিত হয় এবং এর কম্পাংকের ও পরিবর্তন ঘটে।আমরা জানি আলোক তরঙ্গের কম্পাংকের পরিবর্তন ঘটলে এর রং এর ও পরিবর্তন ঘটে। আর একারনেই পৃথিবী থেকে সূর্যকে সাদা না দেখিয়ে হলুদ দেখায়।
অবস্থান
ও আবর্তন:
সূর্য,
মিল্কিওয়ে
গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ এ অবস্থিত। নির্দিষ্ট
করে বলতে গেলে এটি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সর্পিল
বাহুতে অবস্থিত। সূর্য, সম্পূর্ন সৌরজগত নিয়ে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা সুপার ব্ল্যাকহোল কে কেন্দ্র করে ৭২০,০০০কি.মি/ঘন্টা বেগে আবর্তন করে। এত দ্রুত বেগে অবর্তন করলেও মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চারদিকে একবার ঘুরে আসতে সূর্যের ২৩০ মিলিয়ন
(২৩কোটি বছর) সময়
লাগে। সূর্য
যে শুধু মিল্কিওয়ের চারদিকে ঘুরে তাই নয়,
এটি
নিজ অক্ষ বরাবর ও ঘুরে।
এটি
এর কক্ষপথের সাথে ৭।২৫°
কোণে
নিজ অক্ষ বরাবর ঘুরতে থাকে।সূর্য
কোন কঠিন পদার্থ দিয়ে গঠিত নয়,এটি
একটি জ্বলন্ত গ্যাস পিন্ড।তাই
এর একে অংশের অবর্তন বেগ একেক রকম।
এর
মেরু অঞ্চলের পূর্ন অবর্তনে সময় লাগে ৩৬দিন অপরদিকে এর মেরু ব্যাতিত অন্য অঞ্চলের অবর্তনে
সময় লাগে ২৫দিন।
গঠন
ও শক্তি উৎপাদন প্রক্রিয়া:
৪৫০
কোটি বছর আগে সোলার নেবুলা নামক একটি গ্যাস জায়ান্ট থেকে সূর্য ও সৌরজগত উৎপন্ন হয়। গ্রাভিটেশনাল পুলের প্রভাবে
সোলার নেবুলার 99.8% ভর
এর কেন্দ্রের দিকে ঘনীভূত হতে থাকে। কেন্দ্রের
ঘনত্ব বৃদ্ধি সাথে সাথে গ্যাস গুলোর মধ্যে সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেতে থাকে। একই সাথে তাপ ও চাপ বৃদ্ধি
পেতে থাকে। ফলে
শুরু ভয় ফিউশন বিক্রিয়া। এই
ফিউশন থেকে উৎপন্ন বিপুল পরিমান শক্তি সূর্যের কাঠামো প্রদানে সাহায্য করে।কেননা উৎপন্ন এই বহির্মুখী শক্তি কেন্দ্রমুখী
গ্রাভিটেশনাল পুল এর (কেন্দ্রমুখী আকর্ষন বল)
সাথে
সাম্যাবস্থা অর্জন করে।করে
ফলে গ্রাভিটেশনালপুল এর প্রভাবে সূর্য সংকুচিত হয়ে যায়না,
আবার
ফিউশনে উৎপন্ন বহির্মুখী বলের কারনে তা বিষ্ফোরিত
হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে ও পড়েনা। সূর্যের
অভ্যন্তরে মোট চারটি ধাপে ফিউশন ঘটে।
1. P + P = 21H (ডিউটেরিয়াম,যা
হাইড্রোজেনের একটি আইসোটোপ) + 1.44MeV শক্তি |
সূর্যে সংঘটিত মোট বিক্রিয়ার 40%র
ই এই প্রক্রিয়ায় ঘটে এবং মোট শক্তির 10%
এই
প্রক্রিয়ায় পাওয়া যায়।
2. 21H + P = 3He + 5।49 MeV শক্তি।
সংঘটিত বিক্রিয়ার 40% এই
প্রক্রিয়ায় ঘটে এবং মোট শক্তির 39.5% এই
প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়।
3. 3He + 3He
= 4He + 12।86 MeV শক্তি।
সূর্যে সংঘটিত মোট বিক্রিয়ার 17%
এই
প্রক্রিয়ায় ঘটে এবং মোট শক্তির 39.3% এই
প্রক্রিয়ায় পাওয়া যায়।
4. 3He + 4He
= 4He(s) + 19।99 MeV শক্তি।
সূর্যে সংঘটিত মোট বিক্রিয়ার মাত্র 3%
এই
প্রক্রিয়ায় ঘটে এবং মোট শক্তির 10.8% এই
প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়।
সূর্যকে মোট ৬টি অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়।
1)The Core
2)The radio-active zone
3)The convective zone
4)The visible surface (Photosphere)
5)Chromosphere
6)Outermost region (Corona)
Core বা
কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় 15 মিলিয়ন
ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই
উচ্চতাপমাত্রার জন্যই কেন্দ্রে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটে।
কেন্দ্রে উৎপন্ন শক্তি
রেডিয়েশন বা বিকিরন আকারে Convective zone এ
প্রবেশ করে। কেন্দ্র(Core)
থেকে
Convective zone এর উপরের স্তরে পৌছাতে এই রেডিয়েশনের প্রায় এক
লক্ষ সত্তর হাজার বছর সময় লাগে।এই
স্তরের তাপমাত্রা 2 মিলিয়ন
ডিগ্রী সেলসিয়াস যে কেন্দ্রের তুলনায় বেশ কম।
এই
স্তরে শক্তি গুলো প্লাজমা বাবল আকারে উপরের দিকে উঠতে থাকে।
Surface এ আসার পর তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পেয়ে
5,500 ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়ে যায়।
Surface ই হলো সূর্যের দৃশ্যমান অঞ্চল অর্থাৎ যে অঞ্চল
আমরা দেখি। এই অঞ্চলের পুরুত্ব
প্রায় 500 কি।মি।
সূর্য
থেকে নির্গত সকল শক্তি এই স্তর হতেই নির্গত হয়।
Surface এর
উপরে Choromosphere ও
Corona নামের
দুটি পাতলা স্তর রয়েছে। এই
দুটি স্তর মিলে “সৌর বায়ুমন্ডল”
গঠন
করে। এই অঞ্চলের আলোর তীব্রতা
Surface এর চেয়ে কম হওয়ায় আমরা সাধারনত এত স্তরটি দেখিনা।
তবে
পূর্ণ সূর্য গ্রহনের সময় Chomosphere কে
সূর্যের চারদিকে গোলাকার রিং এর মতো দেখা যায় এবং
Corona কে দেখায় সাদা রং এর মুকুটের মতো।
আশ্চর্যের
বিষয় হলো সৌর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রাবেশি 3।5মিলিয়ন
ডিগ্রী সেলসিয়াস যা এর Convective অঞ্চল
এবং Surface থেকেও বেশী।
এই
অত্যাধিক তাপমাত্রার কারন বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো একটি রহস্য।
সূর্যে যখন ফিউশন বিক্রিয়া ঘটে তখন শক্তি উৎপন্ন হওয়ার পাশাপাশি মুক্ত ইলেক্ট্রন উৎপন্ন হয়। এই বিপুল সংখ্যক ইলেক্ট্রনের প্রবাহ সূর্যে একটি জটিল চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরী করে। এই চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিধি পুরো সৌর জগত জুড়ে বিস্তৃত। একে Heliosphere বলে। চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে Surface অঞ্চল থেকে আয়নিত গ্যাস চারদিকে সমস্ত সৌর জগত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যা Solar wind নামে পরিচিত। এই Solar wind কিন্তু পৃথিবী ও জীব জগতের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। আমারা এর থেকে রক্ষা পাচ্ছি আমাদের পৃথিবীর নিজস্ব ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা চৌম্বক ক্ষেত্রের জন্য। Solar wind যখন পৃথিবীর দিকে এগেয়ে আসে তখন তা পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ডে বাধাপ্রাপ্ত হয়, এসময় পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড কিছুটা বিকৃত হলেও পুনরায় তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে।এবং এই আয়নিত কণা গুলো দুই মেরুর আকাশে রঙিন আলোর সৃষ্টি করে যা Aurora নামে পরিচিত।
সূর্যের শেষ পরিনিতি:
সূর্য প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০ কোটি টন হাইড্রোজেন
জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে।এভাবে চলতে থাকলে আগামি ৫০০ কোটি বছর পর সূর্যের সব
জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে।এ অবস্থায় সূর্যের ভিতরের স্তর কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হতে
থাকবে এবং বাহিরের স্তর খুব দ্রুত ফুলে বর্তমান আকার থেকে ১০০ গুন বড় হয়ে
যাবে।এরপর তা অতি অল্প সময়ের মধ্যে পুনরায় সংকুচিত হয়ে অনেক ছোট(বর্তমান আকার থেকে
১৩ লক্ষ গুন ছোট) হয়ে সাদা বামন তারায় পরিনত হবে।
সূর্য সম্পর্কিত আলোচনা আজ এতটুকুই।
দেখা
হবে পরবর্তী পর্বে।
ধন্যবাদ।
Post a Comment